শৈশবের সেই পুরোনো স্মৃতি ঘুড়িতে ফিরে যাওয়া

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
শনিবার, ২৭ জুন ২০২০ | ৩:১০ পূর্বাহ্ণ | 240 বার পঠিত
শৈশবের সেই পুরোনো স্মৃতি ঘুড়িতে ফিরে যাওয়া

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার অনেক কিছুই বিলুপ্তির পথে। ৯০’র দশকের সময় বা তার আগের সময়ের কিশোর-কিশোরীরা নানা রকমের খেলা খেলেছেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলো ঘুড়ি, ঘুড্ডি বাঁশের তৈরীর ডোল উড়ানো। বর্তমানে প্রজন্মের কিশোর -কিশোরীরা কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন হাতে হাতে থাকায় গ্রাম অঞ্চলের খোলা মাঠের মুক্ত আকাশে ঘুড়ি, ঘুড্ডিসহ নানা ধরনের খেলা কি তা অনেকেই জানেই না।

৯০’র দশকের বা আগের সময়ের জম্ম নেওয়া মানুষ বিভিন্ন কর্ম ব্যস্ততার কারণে গ্রাম বাংলার ফাঁকা মাঠের মুক্ত আকাশে ঘুড়ি, ঘুড্ডি সহ নানা ধরনের খেলা খেলতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে করোনায় পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মানুষের ভিতরে যখন আতঙ্ক বিরাজ করছে ঠিক তখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, দোকান-পাট লকডাউনে থাকায় এই সুযোগে শৈশবের সেই পুরোনো স্মৃতিতে ক্ষণিকের জন্য ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ৯০’র দশকের আগের সময়ের জম্ম নেওয়া সেই ঘুড়ি প্রেমীরা।

সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বাড়াকান্দি, কর্ণসূতি, কয়েলগাতি, রসুলপুর এর শিশু তরুণ যুবক এবং মাঝ বয়সীরা করোনার ভয় উপেক্ষা করেই দিনে রাতে নানা রঙের ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন আর এসব ঘুড়ি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে স্থানীয়রা।

কৃষকরা ধান ঘরে তোলার কর্মব্যস্ততা সেরে আলসে সময়টুকুতে বিলাসিতা করে গ্রামের ফাঁকা মাঠের মুক্ত আকাশে চলতো ঘুড়ি, ঘুড্ডি উড়ানোর প্রতিযোগিতা। প্রত্যেক কিশোরের হাতে থাকতো নাটাই ও সুতা। আকাশে উড়তো বিচিত্র নামের রঙিন ঘুড়ি। তার সঙ্গে সুতা কিংবা বেত ও বাঁশের পাতলা চ্যাটা একটি ধনুকের মতো সঙ্গে বিশেষভাবে বেঁধে ঘুড়িতে জুড়ে দিলে উড়ন্ত ঘুড়ি থেকে সুরেলা শব্দ শোনা যেতো। একে ডাক ঘুড়ি বা বেনা ঘুড়ি বলা হতো। বর্তমানে অনেকেই বাড়ির ছাদে বা খোলা মাঠের মুক্ত আকাশে নিজেদের ঘুড়ি উড়ানোর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করছেন। এসব ছবি দেখে অনেকেই ফিরে যাচ্ছে সেই পুরোনো স্মৃতির দিকে। এখনকার চিত্র দেখলে মনে হচ্ছে, সেই ঘুড়ি ওড়ানো বিকেলগুলো হয়তো আজ আবারও ফিরে এসেছে। গ্রামে অঞ্চলের এখন ঘুড়ি উড়ানোর সুন্দর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। শিশু-কিশোররা উড়াচ্ছে ঘুড়ি।

শিশু-কিশোররা রাতে উড়ানোর জন্য ঘুড়ি/ঘুড্ডিতে যুক্ত করেছে ব্যাটারি চালিত বাতি, যা রাতে
উড়ানো ঘুড্ডিতে জ্বলছে। বড়দের কেউ কেউ ঘুড়ি বানাতে পারলেও শিশু-কিশোররা বেশিরভাগই ঘুড়ি কিনে উড়িয়ে থাকে।

কামারখন্দের বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। এ কারণে গ্রামের ঘুড়ি তৈরিতে যুবকরা ব্যস্ত সময় পার করছে। তাদের কাছেই এখন মিলছে ঘুড়ি। সাধারণত যেকোনো ডিজাইনের একটি ঘুড়ি/ঘুড্ডি দাম প্রায় ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

শৈশবের সেই পুরোনো স্মৃতি ঘুড়িতে ফিরে যাওয়াঘুড়িপ্রেমী মাহমুদুল হাসান ছাব্বির (ইউডিসি) মুক্ত ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শৈশবে বন্ধুদের নিয়ে গ্রীষ্মের বিকালে রং বাহারি ঘুড়ি উৎসবে মেতে উঠতাম। একেকটা ঘুড়ির থাকত ভিন্ন ভিন্ন নাম। কখনো কখনো ইচ্ছে করেই একটি ঘুড়ির সুতা দিয়ে অন্যটির সুতা কেটে আনন্দে মেতে উঠতাম। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া আর কর্মজীবন আমাদের কাছ থেকে শৈশবের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে সীমিতভাবে অফিস বন্ধ রয়েছে। তাই এ সুযোগে শৈশবের সেই পুরোনো স্মৃতিতে ক্ষণিকের জন্য ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যদিও পুরোনো সেই বন্ধুরা এখন আর পাশে নেই।

তিনি আরও জানান, ফেসবুকে ঘুড়ি উড়ানোর ছবি পোস্টের দেখা দেখি সবাই সেই পুরানো স্মৃতিতে ফিরেছেন। এছাড়া রাতের আকাশে মিটমিট করে জ্বলা লাল, নীল ঘুড্ডি, ডোল দেখে শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি সব বয়সের মানুষ উপভোগ করছে।

স্কুল পড়ুয়া সাকিবুল, আপেল, সামিউল, সাগর জানান, এখন প্রচুর পরিমাণে ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় ঘুড়ি উড়িয়ে সময় কাটাচ্ছি।

মুক্ত ক্যাম্পাস/আল মারুফ/রানা

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবি গ্রীণ ভয়েসের ফটোগ্রাফি কনটেস্ট
পরবর্তী নিবন্ধরংপুর অঞ্চলে আউশ চাষে ২০ বছরের মধ্যে রেকর্ড