করোনা আতঙ্কে দেশে সব ধরনের খেলা বন্ধের নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক
সোমবার, ১৬ মার্চ ২০২০ | ১১:১০ অপরাহ্ণ
করোনা আতঙ্কে দেশে সব ধরনের খেলা বন্ধের নির্দেশ

করোনাভাইরাসের কারণে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্রিকেট, ফুটবলসহ সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন করারও ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। করোনা আতঙ্কের কারণে খেলা বন্ধের নির্দেশ আসায় অনেকের মাঝে স্বস্তি এসেছে।

আজ সোমবার (১৬ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে সভাকক্ষে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠককালে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের ক্রীড়া আসর বন্ধের নির্দেশ দেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মন্ত্রীসভার বৈঠকে একজন মন্ত্রী বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন ক্রিকেট, ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে, তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সকল ঘরোয়া খেলা আপাতত বন্ধ রাখবেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক কোনও ইভেন্ট যদি থাকে সেটিও এপ্রিলের পরে করার অনুরোধ করবো।

করোনা আতঙ্কে দেশে সব ধরনের খেলা বন্ধের নির্দেশ

এর আগে প্রতিবেশি দেশ ভারতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মতো আসর শুরুর আগেই স্থগিত করা হয়েছে, ভারতের ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্টও বন্ধ। শুধু তাই নয়, ক্রিকেটে ভারত থেকে দেশে ফিরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে গেছে নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে গেছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল। তিনটি দলই লম্বা সময়ের প্রস্তুতি নিয়েই সফরে আসে। অস্ট্রেলিয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে শেফিল্ড শিল্ড ক্রিকেট আসর।

শুধুমাত্র পাকিস্তানে পাকিস্তান সুপার লিগ চলছে, যার শেষ ম্যাচটি অর্থাৎ ফাইনাল বৃহস্পতিবার।

ফুটবলের স্থগিতাবস্থা আরো বেশি দৃশ্যমান। ইংল্যান্ডে, স্পেনে, ইতালিতে বন্ধ রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সব ধরণের লিগ। ইউরোপীয়ান টুর্নামেন্টগুলোও স্থগিত অন্তত এপ্রিল মাসের তিন তারিখ পর্যন্ত।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে অলিম্পিক হওয়া নিয়ে আশাবাদ দেখানোর পর তাকে নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে, এরপর তিনি অলিম্পিক হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি অলিম্পিক কমিটির ওপর ছেড়ে দেন।

শুধু রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশে লিগ খেলা চলছে এখনো।

বিশ্বের সকল ক্রীড়া কর্মকান্ড যখন স্থগিত এবং সামনের দিনগুলোর ক্রীড়া ইভেন্টগুলোও স্থগিত করার কথা ভাবা হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের ইভেন্টগুলো চলছিল সাড়ম্বরে।

রবিবার শুরু হয় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম দিনের খেলা, যেখানে আবাহনী ও পারটেক্স গ্রুপের মধ্যে একটি ম্যাচ হয়। এই ম্যাচে দেখা যায় করোনাভাইরাসের জন্য যেসব আদবকেতা মানার কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেগুলো ঠিকমতো মানেননি ক্রিকেটাররা।

মুশফিকুর রহিম শতক হাকানোর পর জড়িয়ে ধরেন অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে। মাঠে নিয়মিত হাত মেলান ক্রিকেটাররা।

মুশফিক অবশ্য ম্যাচ শেষে বলেছেন, এসব আচরণ হুট করে পরিবর্তন করা কঠিন, যেহেতু অনেক দিনের অভ্যাস।

তিনি বলেন, “একজনের হলে অন্যজন আক্রান্ত হতে পারে। আমি মনে করি, তাদের অবশ্যই সচেতন থাকা উচিত। তারা যদি আমাদের ভালোবাসতে পারে, আমাদেরও তাদেরকে ভালোবাসা উচিত। আমার অনুরোধ থাকবে, সবাই যেন সচেতন থাকেন।”

বাংলাদেশের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বলেন, সরকারি কোনো নির্দেশনার আগে কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না ক্রিকেট বোর্ড।

তিনি বলেন, আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই ইস্যু সবার জন্যই। শুধু আমাদের ব্যাপার না। তবে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, অনেক জায়গায় ঘরোয়া ক্রিকেট চলছে।

এরই মধ্যে সোমবার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড দেশটির ঘরোয়া ওয়ানডে লিগ বন্ধ ঘোষণা করেছে। ২৫শে মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা এই আসর।

বাংলাদেশে খেলা চালিয়ে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে পাপন বলেন, বাংলাদেশের ডমেস্টিক খেলায় এমনিতেও দর্শক হয়না।

এদিকে, করোনাভাইরাসের সতর্কতার অংশ হিসেবে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। ছুটি থাকাকালীন এই সময়টিতে শিক্ষার্থীরা যেন বাড়িতেই থাকেন সেটি নিশ্চিত করতে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া সব কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।

কিন্তু “স্কুল ফুটবল চলবে”, সোমবার দুপুরে বিবিসি বাংলাকে বলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনের কর্মকর্তা ও স্কুল ফুটবলের অন্যতম পরিচালক অমিত খান শুভ্র।

১৭ই মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা জাতীয় স্কুল ফুটবল। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃপক্ষ বলছে পুরোদমে লিগ চলবে বাংলাদেশের সাতটি ভেন্যুতে।

এর আগে করোনাভাইরাস ইস্যুতে নানা প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পেশাদার লিগ কমিটির প্রধাম সালাম মুর্শেদী বলেন, বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের কারণে কিছু ম্যাচ না হওয়ার কথা ছিল, এখন সেগুলো নতুন সূচী অনুযায়ী চলবে।

মুক্ত ক্যাম্পাস/টিআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মের সাথে জড়িয়ে আছে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস’
পরবর্তী নিবন্ধজাবিতে রংপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা