সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিহত রায়হান আহমদকে ‘খুনের’ দায় একা নিতে রাজি নন বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। ৭ দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আকবর বলেন, যা ঘটেছে তাতে সবারই দোষ আছে। তিনি একা কিছু করেননি। সবাই মিলে করেছেন।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) আদালতের এপিপি সৈয়দ শামীম জানান, রায়হানকে হত্যাকাণ্ডের দায় আকবর একা নেননি। ‘আকবর বলেছেন, তিনি একা দায়ী নন। তিনিসহ এই মামলার আসামিরা সবাই মিলেই রায়হানকে পিটিয়ে আহত করেছেন। এরপর রায়হানকে হাসপাতালেও নিয়ে যান তারা। পরবর্তীতে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।’
গত ১০ নভেম্বর সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে আকবরকে হাজির করা হয়। এসময় তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক আবুল কাশেম তা মঞ্জুর করেন।
গত ১১ অক্টোবর (১০ অক্টোবর দিবাগত) মধ্যরাতে রায়হানকে নগরীর কাষ্টঘর থেকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। ১১ অক্টোবর ভোরে ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়িতে ধরে এনে রাতভর নির্যাতনের ফলে রায়হান মারা যান। ১২ অক্টোবর রাত আড়াইটার দিকে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদি হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন।
মামলায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার উল্লেখ করেন, প্রতিদিনের মতো ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে তার স্বামী রায়হান আহমদ নিজ কর্মস্থল নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রাণীর চেম্বারে যান। পরদিন (১১ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে ০১৭৮৩-৫৬১১১১ মোবাইল ফোন নম্বর থেকে শ্বাশুড়ি (রায়হানের মা সালমা বেগম)-এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বর (০১৭৮৭৫৭০৯৪৯)-এ কল দিলে সেটি রিসিভ করেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ।
এসময় রায়হান আর্তনাদ করে বলেন, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন। তাকে বাঁচাতে দ্রুত ১০ হাজার টাকা নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে যেতে বলেন রায়হান। এ কথা শুনে রায়হানের চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়ত্বিরত একজন পুলিশ বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছে। আর যে পুলিশ রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও চলে গেছেন। এসময় হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসার কথা বলেন ওই পুলিশ সদস্য।
পুলিশের কথামতো হাববিুল্লাহ আবারও সকাল পৌনে ১০ টার দিকে ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ জানান, রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। এসময় হাবিবুল্লাহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে ওসমানীর মর্গে রায়হানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ দেখতে পান।
১২ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ রায়হানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পরে বাদ এশা আখালিয়া জামে মসজিদের পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে রায়হানের লাশ দাফন করা হয়।