করোনা সন্দেহে চিকিৎসকের মৃত্যু, বাঁচাতে আসেনি চিকিৎসকরাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ | ১০:৫৮ অপরাহ্ণ

অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত রোগীদের সেবা দিয়েছেন চিকিৎসক আরিফ হাসান। সেই তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গেলে ৪ ঘণ্টা পরও করোনা সন্দেহে কোনো চিকিৎসক পাশে আসেনি! যেসব নার্স-ওয়ার্ডবয় এসেছেন তারাও দূর থেকে দেখে চলে গেছেন।

এমনকি চমেকে প্রথম ৪ ঘণ্টা ধরে কোনো কেবিনও পাননি এ চিকিৎসক। অবস্থা ক্রিটিক্যাল হওয়ার পরও আইসিইউও মেলেনি তার। এমন অবহেলার কারণে পরিবার বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে যান ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা দেওয়ার পর খবর আসে চমেকে আইসিইউ পাওয়া গেছে। কিন্তু তখন চিকিৎসক আরিফ হাসানের অবস্থা সংকটাপন্ন, আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার আগে মৃত্যু হয় তার।

ডা. আরিফ হাসান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ৪৯তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি নগরের কোতোয়ালী থানার আবেদিন কলোনি এলাকায় থাকতেন। ব্যক্তিগত চেম্বারে তিনি রোগী দেখতেন। গত ২ জুন থেকে আরিফ হাসান জ্বরে ভুগছিলেন।

শুক্রবার (১২ জুন) সকালে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় চমেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথমে ৪ ঘণ্টা ধরে কোনো চিকিৎসা না পেয়ে ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। সারাদিন ট্রিটমেন্টে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ওইদিন রাতে খবর আসে চমেকে আইসিইউর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে চমেকে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তার।

চিকিৎসক হয়েও চিকিৎসার অবহেলায় এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার ছোট বোন শায়লা হাসানের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মুনির উদ্দিন হাসান।

তিনি বলেন, চমেকে প্রথমে নিয়ে গেলে সেখানে ৪ ঘণ্টা ধরে কোনো চিকিৎসক পাশে আসেনি। কেবিনে রেখে যে চিকিৎসা দেবে ওইরকম কেবিনও ছিলো না। এছাড়া ওই মুহূর্তে তার আইসিইউ সাপোর্ট রাখতো। কিন্তু আইসিইউও মেলেনি। পরে বাধ্য হয়ে আমরা ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সারাদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রাত ৯টার দিকে চমেকে আইসিইউর ব্যবস্থা করেন ডা. রহমান।

‘কিন্তু তখন আরিফ হাসানের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে যায়। চমেকে নেওয়ার পর আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার আগে তার মৃত্যু হয়।’

আরিফ হাসানের ঘনিষ্ঠ ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আরিফ হাসান শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় পাঠাতে বলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় পৌঁছে দেই। আসলে তার অক্সিজেন ওঠানামা করছিলো। কখনো ৯০, কখন ৮০-৮২ এরকম। চমেকে দ্বিতীয়বার যখন আনা হয় তখন তার অক্সিজেন নেমে গিয়েছিলো ৩০-এ।

‘প্রথমবার তিনি আসার পর আইসিইউ পাননি। তবে রাতে আইসিইউর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।’

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, তার চিকিৎসার সংকটে চিকিৎসকরা পাশে আসেনি এ ধরনের অভিযোগ কেউ আমাদের দেয়নি। তবে প্রথমে যখন আনা হয় তখন আইসিইউ পায়নি। পরে অবশ্যই রাতে আইসিইউর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আফতাবুল ইসলাম বলেন, ডা. আরিফ হাসানের করোনার উপসর্গ ছিল। তিনি পরীক্ষায়ও করেছেন, তবে রিপোর্ট পাননি। কারণ এখন রিপোর্ট পেতে সময় লাগছে।

মুক্ত ক্যাম্পাস/রিফাত

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুবিসাসকে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের শুভেচ্ছা
পরবর্তী নিবন্ধনা ফেরার দেশে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ