করোনা মোকাবেলায় যেভাবে সাফল্য পেল আইসল্যান্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শুক্রবার, ০৩ এপ্রিল ২০২০ | ৬:৪০ অপরাহ্ণ | 116 বার পঠিত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ড। মহামারী প্রতিরোধে পুরো বিশ্ব লকডাউন হলেও এই পথ বেছে নেয়নি দেশটি। সংক্রমণ আটকাতে প্রায় চার লাখ নাগরিকের সবাইকেই পরীক্ষার আওতায় নিয়ে এসেছে। লক্ষণযুক্ত ও লক্ষবিহীন কোনো বাছবিচার নেই।কাজটি বেশ জোরেশোরেই চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সন্দেহজনক এলাকার সবাইকে টেস্ট করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরমার্শ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে দেশটির সরকার ও প্রশাসন। কনট্যাক্ট ট্রেসিং বা ট্রেসার স্টাডি ও টেস্টকে প্রধান অস্ত্র করে অব্যাহতভাবে পরীক্ষা চলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলেই তৎক্ষণাৎ আলাদা করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। ফলে অনেকটাই কমে যাচ্ছে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা। মারাত্মক প্রাণঘাতী এই ভাইরাসকে রুখতে বিশ্বের প্রায় সব দেশই লকডাউন করা হয়েছে। গৃহবন্দি হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ। এরই মধ্যে ৩৮০ বারেরও অধিকবার জিনের বদল ঘটিয়ে ভাইরাসটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। একে প্রতিরোধের উপায় খুঁজতে রীতিমত রাতের ঘুম হারাম হয়েছে বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের।

এই কাজ করতে গিয়ে আইসল্যান্ডের চিকিৎসকরা পেয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপক হারে পরীক্ষার করোনার প্রাদুর্ভাব রোধের চাবিকাঠি হতে পারে। এর মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আসল চিত্রটা ধরা সম্ভব। প্রায় চার লাখ জনসংখ্যার দ্বীপ রাষ্ট্র আইসল্যান্ড ঠিক সেই কাজটিই করছে। রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ১৭ হাজার ৯০০ নাগরিকের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। পরীক্ষা করছে দেশটির ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল। এর বাইরে দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগণের করোনা পরীক্ষা করবে বায়োফার্মা কোম্পানি ডিকোড জেনেটিক্স। যেসব নাগরিকের মধ্যে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পায়নি কিংবা যারা কোয়ারেন্টিনে নেই তাদের সবাইকে পরীক্ষা করছে ডিকোড জেনেটিকস। ডিকোড ইতোমধ্যে ৯ হাজারের বেশি মানুষের পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ১ শতাংশেরও কম মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ শতাংশের মধ্যেই করোনার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। ডিকোড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কেরি স্টেফানসন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে যেসব রোগীর লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না কিংবা কম প্রকাশ পাচ্ছে তাদের মাধ্যমেই এটি বেশি ছড়াচ্ছে। স্টেফানসন বলেন, ‘আমরা যেহেতু সাধারণ মানুষকে পরীক্ষা করছি তাই এমন মানুষও পাচ্ছি যাদের কোনো লক্ষণ নেই কিন্তু করোনাভাইরাস বহন করছেন। অর্থাৎ তাদের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগে ধরা পড়ছে। পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য মতে, শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে এক হাজার ৩১৯ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন চারজন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৮৪জন।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস এর তথ্য অনুযায়ী, আজ শুক্রবার পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৬২ হাজার ২৩৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫৬ হাজার ৫৭০ মানুষ। এছাড়া ২ লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআখাউড়ায় কলেজ ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধকরোনায় লণ্ডভণ্ড যুক্তরাষ্ট্র, একদিনে ১৪৮০ জনের মৃত্যু