করোনায় মৃত্যু বেড়ে ৫৪৩৬, বাড়ি ফিরেছেন ৭২ হাজার মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শনিবার, ১৪ মার্চ ২০২০ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
করোনাভাইরাস: মৃত ৪২৫, ভুল স্বীকার করে নিলো চীন

চীনের উহান থেকে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) গত আড়াই মাসে বিশ্বের ১৪৫টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনে করোনার প্রভাব কিছুটা কমলেও বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে এর প্রকোপ প্রতিদিনই বাড়ছে। আজ শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় মারা গেছেন হয়েছেন ৫৪৩৬ জন। বিশ্বে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৩জন। অপরদিকে ৭২ হাজার ৫৩১ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এই ভাইরাসে শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৮২৪ জন। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ১৮৯ জন। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও নিহত হয়েছেন ইতালিতে। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ৬৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১২৬৬ জনের। ইতালির পরেই অবস্থান করছে ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ইরানে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৩৬৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৫১৪ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৮৬ এবং মারা গেছে ৭২ জন।

এছাড়া বাংলাদেশ, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, বাহরাইন, যুক্তরাজ্যে, মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ডসহ ১৪৫টিও বেশি দেশ ও অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোনো প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে।

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।

করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাই আপাতত এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।

এদিকে, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের চিকিৎসায় আশার খবর দিচ্ছেন একদল বিজ্ঞানীরা। এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের পথে যুগান্তকারী অগ্রগতির দাবি করলেন তারা।

কানাডার সানিব্রুক গবেষণা সংস্থা, টরেন্টো ইউনিভার্সিটি ও ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক জানিয়েছেন, এরই মধ্যে তারা করোনা ভাইরাসের গঠনকাঠামো আলাদা করতে ও তার প্রতিলিপি তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। এই প্রতিলিপির মাধ্যমে বড় আকারে করোনা ভাইরাসের জীবতত্ত্ব বুঝে ওঠা যাবে। আর তা এ ভাইরাস শনাক্তকরণ, নিরাময়, প্রতিষেধক আবিষ্কারে ব্যাপক সহায়তা করবে। খবর নিউ ইয়র্ক পোস্টের।

এক বিবৃতিতে ওই বিজ্ঞানীরা জানান, সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত কানাডার দুই রোগীর শরীর থেকে তারা এ ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা চালান। এবং এক পর্যায়ে করোনার গঠনকাঠামো চিহ্নিত ও এর প্রতিলিপি তৈরিতে সক্ষম হন।

গবেষক দলে থাকা ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির এনএসইআরসি বিষয়ক পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো আরিঞ্জয় ব্যানার্জি বলেন, ‘আমরা কভিড-১৯ ভাইরাস সৃষ্টির নিয়ামক সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমরা এ বিষয়ক তথ্যউপাত্ত অন্য গবেষকদের জানাবো। একটা টিমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে কাজ এগোবে।’

‘এভাবে ল্যাবে এ ভাইরাসের যতো প্রতিলিপি তৈরি করা যাবে গবেষণা ততো এগোবে। করোনা মহামারীর প্রতিষেধক আবিষ্কারে আমাদের প্রধান বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। এ মুহূর্তে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু করাটা জরুরি। দরকারি গবেষণার মধ্য দিয়ে এই নভেল ভাইরাসের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’

মুক্ত ক্যাম্পাস/এসআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধলন্ডনে করোনায় মারা গেলেন সিলেটের আফরোজ মিয়া
পরবর্তী নিবন্ধঅনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাসে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বুয়েট শিক্ষার্থীদের