কথা বলুন, সোজাসুজি বলুন, ফাগুন রেজাসহ সকল হত্যার বিচার চাই

মুক্ত ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
বুধবার, ১২ জুন ২০১৯ | ১০:০৪ অপরাহ্ণ | 586 বার পঠিত

আমাকে যারা দীর্ঘদিন ধরে জানেন কিংবা যারা আমার লেখা পড়েন। তারা একটু খেয়াল করলে দেখবেন। আমার কোন লেখায় পারতপক্ষে ব্যক্তিগত কোন বিষয় টেনে আনিনি। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমে লেখা আমার কলামগুলিতে। কিন্তু কদিন ধরে আনছি। যেহেতু আমার সন্তানকে খুন করা হয়েছে। একজন সন্তানহারা পিতার মনের অবস্থা শুধু সমব্যথী মাত্র বুঝতে পারেন। অর্থাৎ যারা সন্তানহারা হয়েছেন। মনের এই অবস্থায় শোক এবং সাথে ক্ষোভ সব মিলিয়ে লেখাটা সম্ভবত অনধিকারের মধ্যে পড়ে না। কেউ যদি মনে করেন পড়ে, তাহলেও করার কিছু নেই। আমি লিখবো এবং লিখে যাবো।

এখন আসি পেশাগত প্রশ্নে। একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তরুণ একজন গণমাধ্যমকর্মী, যার মাঝে ছিল অসীম সম্ভাবনা। সেই ইহসান ইবনে রেজা ফাগুনের সাথে যারা কাজ করেছেন, তারা সবাই একবাক্যে এর স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দুর্বল ইংরেজির জায়গায় এমন একজনের খুব প্রয়োজন ছিল। আর সেই প্রয়োজন কতটা তা তুলে ধরেছেন সাংবাদিক লেখক তানজিল রিমন ‘ইংরেজি পত্রিকায় কেন ভুল হয়, প্রশ্ন করেছিল ফাগুন’ তার এমন লেখাটিতে। ফাগুন দেশে একটা বিশুদ্ধ ইংরেজি গণমাধ্যম গড়ে তুলতে চেয়েছিল, এমনটাই জানিয়েছেন রিমন তার লেখাটিতে।

সততার প্রশ্ন মাত্র একুশ বছর বয়সেই একশতে একশ পেয়েছিল ফাগুন। জায়ান্ট কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের অন্যায় অফার প্রত্যাখান করে। ওই বয়সে অমন অফার প্রত্যাখান করাটা ছিলো অসম্ভব সততা ও সাহসের কাজ। সেই কাজটি অনায়াসে করেছিল ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন।

অন্য আরেক তরুণের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সব মাধ্যমের করা সংবাদকে অসার প্রমাণ করে চমৎকার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিল ফাগুন। যা অনেক বাঘা বাঘা রিপোর্টারদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছিল। মূলত ফাগুন ইংরেজি মাধ্যমে সাব-এডিটর হিসাবে কাজ করলেও রিপোর্টিংয়েও সিদ্ধহস্ত ছিল সে। আর সম্ভবত এটাই হয়েছিল তার কাল। তার সেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিকে ঘিরে এখন নানা কথা উঠছে। কথা উঠছে সেই শান্তা প্রোপার্টিজের ব্যাপারেও। জায়ান্ট এই নির্মান প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে করা তার প্রতিবেদনটি উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল ফাগুনের সে সময়ের কাজ করা মাধ্যমটি। প্রশ্নতো স্বাভাবিক ভাবে উঠতেই পারে কতটা ক্ষমতাধর ছিল সেই প্রতিষ্ঠান, যার জন্যে একটি মাধ্যমের প্রধান খবরকে অমিট করে দিতে হয়! এমন ক্ষমতা নিয়ে তাই সংশয় জাগে। সংশয় জাগে স্বয়ং সাংবাদিকই যখন অমিট হয়ে যায়।

এমন একজন সম্ভাবনাময় সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ করা প্রতিটি সাংবাদিকের জন্য ফরজ। যে যার অবস্থান থেকেই এই প্রতিবাদ করে যাওয়াটাই উচিত। জানি, অনেকে হয়তো বলবেন, ব্যাপারটাতো জানিই না। তাদের অবশ্য না জানারই কথা। শুধু নিজের কোন সভা-সমাবেশে দেয়া বক্তব্যের খবর কোথায় গেলো, কিংবা নিজের কলামটা কে ছাপলো বা উঠালো, তাই দেখতে সময় শেষ। অন্য ঘটনা পড়া, শোনা বা দেখার সময় কই। এছাড়াও তো আরো অনেক কাজ রয়েছে তাদের। এনাদের কথা আলাদা, এনারা ব্যস্ত ও নমস্য মানুষ। সামান্য ফাগুন রেজা’র জন্য তাদের সময় বের করা বড্ড কষ্টের!

যাক গে, এমন ‘কষ্টকার’দের নিয়ে সময় নষ্ট করার সময় নেই। আমাদের কাজ নিজ দায়িত্বে করে যেতে হবে। দেশটাকে নিরাপদ করতে হবে। একা সরকারের উপর ছেড়ে দিয়ে, কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনীকে দোষারোপ করে নিজের দায়িত্ব এড়ানোটা ভীরুদের কাজ। প্রকৃত মানুষের কাজ হলো যার যা অবস্থান তা থেকে বলে যাওয়া। অনেকে সামাজিকমাধ্যমে বলা নিয়ে ব্যঙ্গ করেন। বলেন, পথে নামার মুরোদ নেই, ফেসবুকে হিরোগিরি। তাদের বলি, প্রযুক্তিগত কারণে, সময়ের চাহিদায় সামাজিকমাধ্যমও এখন একটা যুদ্ধের ময়দান। এখানে লেখালিখিতেও অনেক সময় পিছু হটে অন্যায়কারীরা। টনক নড়ে দায়িত্বশীলদের। সুতরাং এ মাধ্যমকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। এই ফেসবুকাররা, যাদের করা ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ এখন অনেক জায়ান্ট জার্নালিস্টদের ‘ইয়ে’ খুলে দিচ্ছে।

যারা সামাজিকমাধ্যমে আওয়াজ তুলতে চান, তুলুন। জোর গলায় বলুন, আমরা আর কোন ফাগুনের মৃতদেহ রেললাইনের পার্শ্বে পরে থাকতে দেখতে চাই না। আর কোন ছাত্রকে বাস থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা দেখতে চাই না। অনিরাপদ সড়ক দেখতে চাই না। আর কোন নারীর ধর্ষিত হবার, খুন হবার খবর শুনতে চাই না। বলুন, সোজা ভাষায় বলুন। একে অন্যকে দোষারোপ করে নেয়, স্ট্রেইট বলুন, এসব চলবে না, বন্ধ করতে হবে। দেখবেন আওয়াজ যদি সম্মিলিত হয় তবে কাজ হতে বাধ্য।

ফাগুন রেজা হত্যার প্রায় মাস হতে চললো। উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই। কেন নেই, তাও একটা প্রশ্ন। আমাদের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। তারা যে সক্ষম, তার প্রমাণ তারা অনেক ক্ষেত্রেই রেখেছেন। ব্যতিক্রম যে নেই, তা বলা যাবে না। তবে তা আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর ত্রুটি নয়, ত্রুটিটা অন্য কোনখানে।

তবে আমরা সাংবাদিকরা আজো আস্থা রাখতে চাই, আইন-শৃংখলার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের প্রতি। জানি ব্যতিক্রম রয়েছে, তা সত্বেও সাংবাদিকতার বাইরে একজন পিতা হিসাবেও তাদের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। তারাও পিতা, তাদেরও সন্তান রয়েছে। নিজ সন্তানের মুখ চেয়ে তারা একজন পিতার আর্জিকে ফিরিয়ে দেবেন এ আমার বিশ্বাস হয় না, হওয়া উচিত নয়।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

মুক্ত ক্যাম্পাস/রানা

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাণীর চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে বিলুপ্ত হচ্ছে উদ্ভিদ প্রজাতি
পরবর্তী নিবন্ধসংসদে মনজুর শাহরিয়ারকে স্বপদে রাখার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর