সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০ | ১১:৪১ অপরাহ্ণ
সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান আর নেই

কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খান মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)। তিনি ডায়বেটিকসসহ নানা রকম বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খানের নিকট আত্মীয় সাংবাদিক দেলোয়ার হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় বাসাতেই শেষ নিঃশ্বাস করেন রাহাত খান। ওনার শেষ ইচ্ছা ছিল মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত হওয়া। আমরা দায়িত্বশীল সংস্থার সাথে কথা বলে সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। রাতে মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে।

এছাড়া রাত সোয়া ৯টার দিকে অপর্ণা খান নিজের ফেসবুক প্রোফাইলেও রাহাত খানের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।

গত ২০ জুলাই রাহাত খানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন বাসায় খাট থেকে নামতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান তিনি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এক্স-রে করা হলে পাঁজরে গভীর ক্ষত ধরা পড়ে। এর পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে তাকে বারডেম হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুন: এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। যার জন্য তার চিকিৎসা প্রক্রিয়াটা জটিল হয়ে পড়ায় সার্জারি করা যাচ্ছিল না বলে বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।

রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা এর আগে জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকেরা ২৯ জুলাই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালে থেকে কোনো লাভ হবে না। ডায়েবেটিস, কিডনি, হার্টে সমস্যা থাকার কারণে কোনো সার্জারি করা যাবে না। এজন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় রাহাত খানকে।

রাহাত খান বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখাতেই তার অবদান উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খানের অবদান উল্লেখযোগ্য। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনি ষাটের দশক থেকে কর্মরত। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন। বিখ্যাত সিরিজ মাসুদ রানার রাহাত খান চরিত্রটি তার অনুসরণেই তৈরি করা।

তিনি ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামের খান পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও কর্মসূত্রে রাহাত খান আপাদমস্তক সাংবাদিক।

রাহাত খান ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে রাহাত খান কিছুদিন জোট পারচেজ ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে যোগদান করেন। তারপর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেছেন তিনি।

১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় তার সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। বর্তমানে তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবনে রাহাত খান কথাশিল্প, ছোটগল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও উপন্যাসের নিপুণ কারিগর হয়ে উঠেছেন। ১৯৭২ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ অনিশ্চিত লোকালয় প্রকাশিত হয়। তার পরবর্তী উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অমল ধবল চাকরি, ছায়াদম্পতি, শহর, হে শূন্যতা, হে অনন্তের পাখি, মধ্য মাঠের খেলোয়াড়, এক প্রিয়দর্শিনী, মন্ত্রিসভার পতন, দুই নারী, কোলাহল ইত্যাদি।

ইতিমধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় একুশে পদক (১৯৯৬) পেয়েছেন।

মুক্ত ক্যাম্পাস/এসপি

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবার চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মানবিক আবেদন
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আনছে বেক্সিমকো