ইবির চার দশকের পথ চলা

শাহীন আলম, ইবি প্রতিনিধিঃ
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৯ | ৬:১৪ অপরাহ্ণ | 213 বার পঠিত

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। তাই দেশের মানুষের স্বপ্ন এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যেখান থেকে একাধারে বেরিয়ে আসবে সুবিজ্ঞ ইসলামী স্কলার, অন্যদিকে সাধারণ জ্ঞান বিজ্ঞানে সুপণ্ডিত গ্রেজুয়েট। আর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেটে যায় পৌনে এক শতাব্দী এবং সাথে বহু রক্তঝরা আন্দোলন।

বলছি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এবং দেশের সপ্তম বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা, বলছি ১৭৫ একরের সবুজ ক্যাম্পাস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।

১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান উচ্চতর ইসলামী-শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পাঠ দানের লক্ষ্যে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার শান্তিডাঙ্গা ও দুলালপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামক দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ।

১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের পাশ করা হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন। ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ অধ্যাপক ড. এ.এন.এ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরীকে। সেই সময়ে ২টি অনুষদের অধীনে ৪টি বিভাগের মোট ৩০০ ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়কে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর করেন তৎকালীন এরশাদ সরকার। আর এতেই শুরু হয়ে যায় তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন। গ্রেফতার করা হয় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে।

১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি প্রবল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনরায় কুষ্টিয়াতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত মন্ত্রী পরিষদে গৃহীত হয়। ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হয় কুষ্টিয়ায়।

১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ৫টি বিভাগ চালু করার পাশাপাশি প্রথমবার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির রেওয়াজ চালু করা হয়। এমনকি এবছর থেকেই চালু হয় ছাত্রী ভর্তির নিয়ম।

১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে উদ্বোধন করা হয় শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। একই সাথে উচ্চতর ডিগ্রী প্রদানের জন্য ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয় এমফিল ও পিএইডি কার্যক্রম। এ বছরেই ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তন।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার ডিগ্রিধারীসহ ১৪ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ৪র্থ সমাবর্তন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ অবধি সর্ববৃহৎ সমাবর্তন হিসেবে পরিচিতি।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধীনে ৮টি অনুষদের ৩৪টি বিভাগ, ১টি ইনস্টিটিউট এবং ১টি ল্যাবরেটারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৪ জন শিক্ষার্থী, ৪০০ জন শিক্ষক, ৪৬৪ জন কর্মকর্তা, ৩৫১ জন সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারী।

বর্তমানে এমফিল কোর্সে ২৮৫ জন এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী গবেষণাকর্মে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এপর্যন্ত ৬২১ জন শিক্ষার্থীকে এমফিল ডিগ্রি এবং ৪২১ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।

১৭৫ একর আয়তনের এই সবুজ ক্যাম্পাসে রয়েছে ১টি প্রশাসনিক ভবন, ৫টি ছাত্র হল, ৩টি ছাত্রী হল, ১টি অত্যাধুনিক লাইব্রেরি, ১টি মিলনায়তন, ৬টি একাডেমিক ভবন, উপাচার্যের বাসভবনসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার।

এছাড়াও রয়েছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারক মুক্ত বাংলা, শহীদ মিনার, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত শহীদের স্মারক শহীদ স্মৃতিসৌধ, মৃতুঞ্জয়ী মুজিব, কেন্দ্রীয় মসজিদ, প্রকৌশল ভবন, দৃষ্টিনন্দন লেক, সততা ফোয়ারা, মুক্তমঞ্চ, ইবি থানা, ডাকঘর ইত্যাদি।

এছাড়াও চলছে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকীকরণের মহাযজ্ঞ। বাস্তবায়ন হচ্ছে ৫শত ৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগা প্রকল্প। উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হবে ৯টি দশতলা ভবন ও ১টি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার এবং উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ হচ্ছে ১৮টি ভবনের।

দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণাধর্মী শিক্ষা কার্যক্রম, আবাসিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং সেশনজট হ্রাস করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধন সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিকীকরনের পথে ক্রমেই এগিয়ে চলছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপিঠ ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’।

মুক্ত ক্যাম্পাস/শাহীন/এমআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ণাঢ্য আয়োজনে ৪১তম ইবি দিবস পালিত
পরবর্তী নিবন্ধবগুড়ায় গৃহবধুর মাথা ন্যাড়া করে দিলেন স্বামী, আটক ১