ইতালির যে শহরে বীরের সম্মান পাচ্ছেন চীনারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শুক্রবার, ০৩ এপ্রিল ২০২০ | ৬:১৭ অপরাহ্ণ

মহামারী করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব যেখানে বিপর্যস্ত, সেখানে ইতালির প্রাতো শহরে বসবাসকারী চীনা বংশোদ্ভূত ৫০ হাজার নাগরিকের কেউ-ই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বাঁচার জন্য তারা কেউ-ই বাসা থেকে বের হননি। চীনের কাছ থেকে তারা এই কৌশল আয়ত্ব করে নিজেদের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। গত বছরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে প্রথম এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইতালি ও স্পেনে।

ইতালিতে শুক্রবার পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ২৪২ জন। ইউরোপের প্রতি ১০০ মৃত্যুর মধ্যে ৩৬টি ইতালিতে হয়েছে। চীনে করোনা ছড়িয়ে পড়লে দেশটির নাগরিকরা ঘরে থাকাকেই বাঁচার কৗশল হিসেবে বেঁছে নিয়েছিল। প্রাতো শহরের চীনারাও সেই উপায় অবলম্বন করেন। করোনামুক্ত থাকায় ইতালিতে তারা এখন বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন। অথচ মাস দুয়েক আগে যখন কোভিড-১৯ রোগটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শহরটির চীনা বংশোদ্ভূতদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। এটাকে লজ্জাজনক বৈষম্য হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাতোর চীনা বংশোদ্ভূত লোকজন চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের এই ভাইরাস থেকে বাঁচিয়েছেন। অর্থাৎ ঘর থেকে বের না হওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই ছিল তাদের মূলমন্ত্র। গত জানুয়ারির শেষ দিক থেকে তারা নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখতে শুরু করেন। শহরটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেনজো বার্তি বলেন, ‘আমরা ইতালীয়রা আশঙ্কা করেছিলাম, প্রাতোর চীনাদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। অথচ তারা ইতালীয়দের চেয়ে অনেক ভালো আছে। প্রাতোতে বাস করে এমন কোনো চীনা নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।’

প্রাতো শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ জাতিগত চীনা। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ায় ইতালিতে গড় সংক্রমণের হার কমিয়ে এনেছে, অন্যথায় তা আরও বাড়ার আশঙ্কা ছিল। চীনা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ফ্রান্সেসকো উহু বলেন, গত ফেব্রæয়ারিতে ইতালির অনেক ব্যবসায়ীকে তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য অনুরোধ জানালে তাঁরা এমনভাবে তাকিয়েছিলেন যেন মিথ্যা বলছি। কেউ তখন বিশ্বাস করেননি মহামারি এভাবে সংক্রমণ ঘটাবে।

চীনা ব্যবসায়ী লুকা ঝু গত ৪ ফেব্রুয়ারি চীন থেকে ইতালির প্রাতো শহরে ফেরেন। বাসায় ফিরেই স্ত্রী ও সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কোয়ারেন্টিনে থাকেন ১৪ দিন। চীনারা এসময় কোনও রেস্টুরেন্টে কিংবা ক্লাবে যায়নি। এ সময় তারা ঘরে অবস্থান করে। নিজেদের অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক রেখেছে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে আগে মাস্ক, গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েই বের হয়েছে। ইতালীয়দের তারা এভাবে সুরক্ষা নিয়ে বের হতে বললে তারা বরং চীনাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে। এমনও দেখা গেছে ইতালীয়রা শহরের কর্তৃপক্ষের কাছে চীনাদের বিরুদ্ধে বিষয়টি নিয়ে নালিশ পর্যন্ত করেছে। কিন্ত যখন অনুধাবন করতে পেরেছে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে মানুষের মাঝে ভাইরাসটির সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলতি বছর এশিয়ায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের : এডিবি
পরবর্তী নিবন্ধআখাউড়ায় কলেজ ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার