বিক্ষোভের আগুন এতটা ভয়াবহ হবে, ভাবেননি অমিত শাহরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ | ২:৫২ অপরাহ্ণ | 108 বার পঠিত
আসামে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে নিহত ৩

বিক্ষোভ হবে জানা ছিল। কিন্তু এভাবে বিক্ষোভের আগুন স্বতঃস্ফূর্তভাবে গোটা আসামে ছড়িয়ে যাবে তা সম্ভবত ভাবতে পারেননি অমিত শাহরা।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় যতক্ষণে পূর্ণ উদ্যমে নামলেন ততক্ষণে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ জানিয়ে মারা গেছেন একাধিক ব্যক্তি। আসামে বিজেপি সরকার ক্ষমতায়। ফলে সেখানে প্রাণহানির ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্র: আনন্দবাজার

বিশেষ করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর রক্তপাতের আশঙ্কা ছিল গোটা উপত্যকায়। তলে তলে চিন্তায় ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও। কিন্তু প্রায় চার মাসের পর সেখানে কোনও নাগরিকের মৃত্য হয়নি বলে অমিত শাহ সংসদে দাবি করেন, তখন বিলটি ঘিরে তুমুল আন্দোলন চলছে আসামে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, গোয়েন্দা তথ্য ছিল আসামের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিক্ষোভ হতে পারে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার বিলটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকাগুলোতে ওই আইন প্রযোজ্য হবে না।

জনজাতিদের জমি কেড়ে নেওয়া বা সেই এলাকায় কাউকে অন্যদের বসবাস করতে দেওয়ার প্রশ্নই নেই। তা ছাড়া বাঙালি হিন্দুরা মূলত বসবাস করেন বরাক এলাকায়। যা জনজাতিদের এলাকা থেকে অনেকটাই দূরে। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় ভাবেও প্রচার চালানো হয় যে ওই আইন প্রযোজ্য হলে স্থানীয় জনজাতিদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব আইনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গৌহাটি। বহু নাগরিক এই আইনের ফলে হারিয়েছেন তাদের দীর্ঘদিনের নাগরিকত্ব। প্রতিবাদ জানিয়েছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। কারফিউয়ের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তারা। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দু’জন বিক্ষোভকারী।

ভারতের এমন পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলও। শুক্রবার বাংলাদেশের যুগ্ম কমিশনারের গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর সফর বাতিল করেছেন দু’জন বাংলাদেশি। আগামী সপ্তাহে গৌহাটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তা সম্মেলন স্থগিত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরও দাবি করেছে, দেশ থেকে মুসলিম নাগরিকদের সরাতে ভারতের এই নয়া নাগরিকত্ব আইন যথেষ্টই ‘বৈষম্যমূলক’।

গতকাল শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স বলেন, ‘নতুন নাগরিকত্ব আইনটি বৈষম্যমূলক’। এই আইনের বৈধতা ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই আইন খতিয়ে দেখতে চলেছে। এই আইন পর্যালোচনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষায় ভারতের দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গটিও আদালত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রস্তাব গত ১০ ডিসেম্বর ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয়। পরে তা উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও পাস হয় এবং বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে তা আইনে পরিণত হয়।

আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও বাইরে থেকে আসা মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। আইনটির প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ চলছে।

মুক্ত ক্যাম্পাস/কেআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধনবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষকে বরণ ও বিদায়ী কোষাধ্যক্ষকে সংবর্ধনা
পরবর্তী নিবন্ধকিডনি ফাউন্ডেশন সিরাজগঞ্জ’র বার্ষিক সম্মেলন ও সেমিনার