দ্বিতীয়বার পুনর্জন্মেও বলব আমি শিক্ষক হতে চাই

মাহফুজুর রহমান, ময়মনসিংহ
মঙ্গলবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১:২৪ অপরাহ্ণ | 253 বার পঠিত
দ্বিতীয়বার পুনর্জন্মেও বলব আমি শিক্ষক হতে চাই

ইতিহাস ঐতিহ্যে অনন্য ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বোররচর ইউনিয়নের সবুজ শ্যামল প্রকৃতিতে ঘেরা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী একটি গ্রাম কুষ্টিয়াপাড়া। বর্তমানে কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও চরাঞ্চলে অবস্থিত তৎকালীন এই গ্রামের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা থেকে শুরু করে ছিল না মানসম্মত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুর্গম এই গ্রামের সবুজ চত্বর থেকে বেড়ে উঠা এক অদম্য তারকার নাম শেখ মাজেদুল হক।

ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও শান্ত প্রকৃতির। শত বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে জীবন সংগ্রামের স্রোতে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য স্পৃহা তিনি ছোটবেলা থেকেই মনেপ্রাণে লালন করেছিলেন। শৈশবে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে সাতরিয়ে বেড়ানো অদম্য এই বালকের পড়ালেখার প্রতিও ছিল ভীষণ আগ্রহ। ফলশ্রুতিতে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুক্তাগাছা আর.কে.সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও শহীদ স্মৃতি সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।

এরপর দেশের অন্যতম স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিস অনুষদের মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন। অত্যন্ত মেধাবী এই তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও ধরে রেখেছেন সফলতার সোনালি ধারা। ফলশ্রুতিতে মার্কেটিং বিভাগ থেকে অনার্সে সিজিপিএ ৩.৭৭ এবং মাস্টার্সে সিজিপিএ ৩.৮৭ অর্জন করে সফলতা ধরে রাখেন। এরপর ২০১৬ সালে রাবির আই.বি.এ. থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে এম.ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বও পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বেরোবি’র ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হিসবে সর্বদা মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। বিয়ে করেছেন ঐতিহ্যবাহী পাবনার সুজানগর উপজেলা থেকে বেড়ে উঠা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শিউলি আক্তারকে। কর্মজীবনে উনার সহধর্মিণীও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। দাম্পত্য জীবনে উনাদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

দ্বিতীয়বার পুনর্জন্মেও বলব আমি শিক্ষক হতে চাই

সার্বিক বিষয়ে শিক্ষক শেখ মাজেদুল হকের সাথে কথা হলে তিনি মুক্ত ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি যে গ্রাম থেকে বড় হয়েছি সেটি দুর্গম ও সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত একটি গ্রাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমার পড়াশোনার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। তাই নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ আমি এ পর্যায়ে এসেছি। এক্ষেত্রে আমার মা-বাবার দোয়া ও আশীর্বাদ ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি। আমার নানা মরহুম ফয়েজ উদ্দিন সরকারও এক্ষেত্রে অনেক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।’

কর্মজীবনে শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া। এমনকি আমার দ্বিতীয়বার পুনর্জন্ম হলেও বলব আমি শিক্ষক হতে চাই। কারণ শিক্ষকতা এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে সরাসরি তরুণ প্রজন্মকে সঠিক গাইডলাইন দেওয়া যায়। আমার দেওয়া উপদেশ, পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় অনুপ্রাণিত হয়ে যদি একজন শিক্ষার্থীর জীবনেও প্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটে তখন আমি মনে করব একজন শিক্ষক হিসেবে এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা। এমনকি আমি খুব আনন্দ অনুভব করি যখন শুনি আমার ছাত্র-ছাত্রীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফলতার সোনালি মালা পরে এগিয়ে যাচ্ছে। আর ছাত্র-শিক্ষকের সুমধুর সম্পর্কই পারে একটি জাতিকে বদলে দিতে’।

আরও পড়ুন

তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে শিক্ষক শেখ মাজেদুল হকের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকের তরুণেরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত।তোমরা সুশিক্ষা অর্জন কর। তোমরা সবসময় মা বাবাকে শ্রদ্ধা করবে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অর্জন কর।সকল প্রকার মাদক, অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকবে। মনে রাখবে তোমরা যারা তরুণ তারাই আগামীর সমাজ, নগর ও সভ্যতা বিনির্মাণের কারিগর। ‘শিক্ষক শেখ মাজেদুল হকের ব্যাপারে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে গেলে মাজেদ স্যারের ক্লাসগুলো আমাদের কাছে অসাধারণ ও অতুলনীয়। স্যারের ক্লাস একদিন মিস হয়ে গেলে মনে হয় জীবনের অনেক কিছুই মিস করে ফেলছি।’ এলাকাবাসী জানান, ‘বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শেখ মাজেদুল হক আমাদের এলাকার গর্ব। তিনি আজ নিজ গুণে গুণান্বিত।’

পরিশেষে এলাকার উন্নয়ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও কথা হয় একজন আদর্শ ও ন্যায় নীতির পথে অবিচল শিক্ষক শেখ মাজেদুল হকের সাথে। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের হাজারো সোনালি স্মৃতি জড়ানো গ্রামটিকে আমি অত্যন্ত ভালবাসি। এই গ্রামের কিছু মানুষের অসহায় জীবনযাপন ও দুঃখ-দুর্দশা দেখে আমি বড় হয়েছি। আমি এই সকল সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের পাশে থাকতে চাই। সেই সাথে আমি আমার এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন তথা মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই।’

কর্মজীবনে সূদুর রংপুরে অবস্থান করলেও এলাকার প্রতি কেমন আকর্ষণ অনুভূত হয় এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদিও জীবনের টানে রংপুরে থাকি তবুও মনটা সবসময় আমার এলাকায় পড়ে থাকে। আমার এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে বিমোহিত করে। আমার স্মৃতির পাতায় সর্বদাই চির অম্লান থাকবে আমার এলাকার প্রকৃতির কথা, কুষ্টিয়াপাড়ার মাটি ও মানুষের কথা।’

মুক্ত ক্যাম্পাস/মাহফুজ/জেডআর

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক ড. শাহ আলমের মৃত্যুতে চবি উপাচার্যের শোক
পরবর্তী নিবন্ধসুনামগঞ্জে বজ্রপাতে ৬ বছরে মৃত্যু শতাধিক!