অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ করল ছাত্রলীগ, ৫০ জনের নামে মামলা

মুক্ত ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ | 377 বার পঠিত

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে টেনে-হিঁচড়ে গভীর পুকুরে ফেলে দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে অধ্যক্ষ নামাজ পড়ে নিজ কার্যালয়ে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ।

শনিবার (২ নভেম্বর) রাত ৯টায় তিনি নগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা দায়ের করেন। চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘৫০ আসামির মধ্যে আটজনের নাম উল্লেখ করেছেন অধ্যক্ষ।’

ওই ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, একটি পুকুর পাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ। সেখানে থাকা কয়েকজন তাকে টেনে-হিঁচড়ে পুকুরে ফেলে দেন। এ সময় সেখানে আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যক্ষ ফরিদ বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা অন্যায় দাবি নিয়ে আসতো আমার কাছে। সেসব দাবি না মানায় তারা আমার ওপর ক্ষুদ্ধ ছিল। তাদের দাবিগুলো মানার মতো থাকে না।’

মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন–কম্পিউটার বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভ, ইলেক্ট্রনিক্স ৫ম পর্বের শিক্ষার্থী মুরাদ, পাওয়ার বিভাগের সাবেক ছাত্র শান্ত, ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের সাবেক ছাত্র বনি, মেকাটনিক্স বিভাগের সাবেক ছাত্র হাসিবুল ইসলাম শান্ত, ইলেক্ট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সাবেক ছাত্র সালমান টনি, একই বিভাগের ৭ম পর্বের ছাত্র হাবিবুল ও কম্পিউটার বিভাগের সাবেক ছাত্র মারুফ।

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের দাবি, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ঘটনার সময় তাদের কয়েকজনের মুখ রোমালে বাঁধা ছিল। রাতের মধ্যেই অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে রবিবার (৩ নভেম্বর) থেকে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।

এদিকে, অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা নেয়। এই ধরনের অনেক অভিযোগ আসে আমার কাছে। শিক্ষার্থীরা টাকা না দিলে তাদের মারধরের হুমকি দেয়। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা করে না। ক্লাস করে না, পরীক্ষা দেয় না। ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে নিয়ে যায়।’

এদিকে, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিব। শনিবার রাতে রাজশাহীর মহানগর ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক ফজলে রাব্বির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা তদন্তে নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ কুমার জয়, প্রণব সরকার, জহুরুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন রুবেল, যুগ্ম-সম্পাদক তাসকিন পারভেজ সাতিল ও মিলন কুমার সরকারকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন বলেন, ‘অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’ এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘খবর পেয়ে পলিটেকনিকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মুক্ত ক্যাম্পাস/এএএম

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে ইবি’র মতবিনিময়
পরবর্তী নিবন্ধঢাকার দুই সিটির নির্বাচন জানুয়ারিতে